জেলার গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় ব্যাপকভাবে ভাসমান বেডে সবজি চাষ শুরু হয়েছে। এ পদ্ধতিতে শীত ও বর্ষার সময়েও শাকসবজি চাষ করা সম্ভব। এ ধরনের প্রযুক্তিতে খরচ যেমন কম, তেমনি সবজিতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রবও কম। তাই কীটনাশক ও সারের ব্যবহারও নেই বললেই চলে। নতুন এ প্রযুক্তি আশা জাগাচ্ছে কৃষকদের মাঝে।
হাওর প্রধান সিলেট অঞ্চলের পুকুর, ডোবা, খাল, বিল ও নালা সারা বছর পানিতে ভরা থাকে। বৃষ্টিবহুল এ অঞ্চলে দেশের অন্যান্য এলাকার সবজি ফলানোর সুযোগ কম। ফলে পুরো এলাকার সবজি ঘাটতি মেটাতে নির্ভর করতে হয় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ওপর।
সরেজমিনে সম্প্রতি ফেঞ্চুগঞ্জ রোডের কঠালপুর এলাকায় দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশের জলাশয়ে ভাসমান বেডে বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ করা হচ্ছে। বাঁশের খুঁটি ও পাতা দিয়ে মাচা তৈরি করে দেয়া হয়েছে।
কৃষকদের ভাসমান বেডে সবজি চাষের কৌশল শিখিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে সিলেটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগে কর্মরত বিজ্ঞানীরা জেলার বিভিন্ন ডোবায় ভাসমান বেডে সবজি চাষে এলাকার কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরামর্শ দেন। এরপর কৃষকরা ডোবায় সবজি চাষ শুরু করেন। বেডগুলোতে কৃষকরা শসা, লাউ, চালকুমড়া, লালশাক, কলমিশাক, ঢেড়শসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ করছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় জলাশয়ে ভাসমান বেডে এ সবজি চাষে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ প্রকল্পের নাম ভাসমান কৃষি প্রযুক্তি জনপ্রিয়করণ ও সম্প্রসারণ। এর আওতায় আগ্রহী চাষিদের প্রাথমিকভাবে বিনামূল্যে বেডে তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত গোলাপগঞ্জ ও কঠালপুর এলাকায় ১৫০ বেডে চাষ করা হচ্ছে।
কৃষক বিলাল আহমদ বলেন, ‘ভাসমান বেডে সবজি চাষ এক নতুন পদ্ধতি। পতিত ডোবা ও পুকুরে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষের ফলে আমিসহ অন্য কৃষকরা ভেজালমুক্ত সবজি উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি।’
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগ সিলেটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহমুদুল ইসলাম নজরুল বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলে সবজির ঘাটতি রয়েছে। এখানে এ প্রযুক্তিতে পানির ওপর স্বল্প খরচে সবজি চাষ করা যাচ্ছে। যারা ভাসমান বেডে সবজি চাষ করবেন তারা নিজেদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রিও করতে পারবেন। আমরা এ প্রযুক্তিকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।’